বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন
আপডেটঃ
বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জিয়া সাইবার ফোর্স চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার শ্রদ্ধা নিবেদন পটিয়া উপজেলা ও পৌরসভা জিয়া সাইবার ফোর্স বিজয় দিবস পালিত। বিজয় দিবসে স্মৃতিসৌধে নাশকতার পরিকল্পনা, ছাত্রলীগ কর্মী আটক। বিজয়ের দিনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন লায়ন খোরশেদ আলম। স্মৃতিসৌধে জিয়া সাইবার ফোর্সের শ্রদ্ধা; শহীদদের প্রতি গভীর সম্মান জ্ঞাপন। ভারত থেকে দাউদের সেলফি: সীমান্ত পেরোতে সাহায্য নানকের পিএস-এর। গাজীপুর জেলা জিয়া সাইবার ফোর্স উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত টঙ্গীতে বিএনপির গণসংযোগে উৎসবমুখর পরিবেশ, রনি সমর্থনে হাজারো নেতাকর্মীর মিছিল তফসিল ঘোষণার পরদিনই মাঠে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, আচরণবিধি তদারকিতে কঠোর নজরদারি শুরু নলকূপের গর্তে পড়ে যাওয়া শিশু সাজিদকে মৃত ঘোষণা।

প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে কর আরোপ: প্রয়োজনীয় সংস্কার নাকি আত্মঘাতী পদক্ষেপ?

Coder Boss
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১৩৭ Time View

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। প্রতি বছর দেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে প্রবাহিত কোটি কোটি ডলার, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণের কিস্তি ছাড়ার শর্ত হিসেবে রেমিট্যান্সে কর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে, যা বর্তমানে দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখন পর্যন্ত, সরকার রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে প্রবাসীদের জন্য আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে আসছে, যা রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়াকে সহজতর করেছে। আইএমএফের এই নতুন প্রস্তাব রেমিট্যান্সের ওপর কর চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে দেশের রাজস্ব বৃদ্ধি করার লক্ষ্য নিয়ে আসলেও, এতে আরও বড় আর্থিক প্রভাব পড়বে, বিশেষ করে প্রবাসী কর্মীদের জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা হতে পারে।

আইএমএফের প্রস্তাব এবং প্রভাব

আইএমএফের প্রস্তাব রেমিট্যান্সে কর আরোপের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে নেওয়া হলেও, এতে প্রবাসী সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি দেশীয় অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হতে পারে, কারণ এতে প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে উদ্বুদ্ধ হতে পারে, যা সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর হার কমে যেতে পারে, ফলে দেশটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিপর্যস্ত হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় ২৬.৮০ শতাংশ বেড়েছে। এই প্রবৃদ্ধি, বিশেষ করে ডলার সংকট মোকাবিলায়, সরকারের জন্য একটি ইতিবাচক চিত্র উপস্থাপন করলেও, রেমিট্যান্সে কর আরোপের ফলে তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন যে, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স কমে গেলে তা বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে চাপ সৃষ্টি করবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থাকে দুর্বল করতে পারে।

এনবিআরের অবস্থান

এদিকে, এনবিআরের কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে বলেছেন, তাদের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় আইএমএফের রেমিট্যান্সে কর আরোপের প্রস্তাব গ্রহণের কোনো পরিকল্পনা নেই। এনবিআরের চেয়ারম্যান, মো. আবদুর রহমান খান, বলেন, “ব্যালান্স অব পেমেন্ট ও রিজার্ভে সমস্যা রয়েছে। এটি আমাদের জন্য বাস্তবসম্মত নয়।”

এছাড়া, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্যও নতুন কর চাপ একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। আইএমএফের পরবর্তী মিশন ঢাকায় এসে ব্যবসায় লোকসান হলেও কর আরোপের প্রস্তাব দিয়ে দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের উপর চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষত, তিন কোটি টাকার বেশি টার্নওভার থাকলে ০.৬০ শতাংশ ন্যূনতম কর দিতে হবে, এমনকি ব্যবসায় লোকসান হলেও। এটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

অন্যান্য সংস্কারের চাপ

আইএমএফের পরবর্তী মিশন রাজস্ব ঘাটতি কমাতে একাধিক সংস্কারের জন্য চাপ দিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে একক ভ্যাটহার প্রবর্তন, পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন এবং কর ফাঁকি রোধে কঠোর তদারকি। তবে এসব সংস্কারের পাশাপাশি রেমিট্যান্সে কর আরোপের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে, দেশের অর্থনীতির জন্য তা বিপজ্জনক হতে পারে।

অর্থনীতিবিদদের মতামত

অর্থনীতিবিদরা দৃঢ়ভাবে মনে করছেন যে, রেমিট্যান্সে কর আরোপ করা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রে আঘাত করবে। ড. সেলিম রায়হান বলেন, “রাজস্ব বাড়ানোর পথ উৎপাদন ও বিনিয়োগে হওয়া উচিত, প্রবাসীর ঘাম নয়।” এর মানে, রেমিট্যান্সে কর আরোপের পরিবর্তে অর্থনীতির মূল খাতগুলোতে সংস্কার আনা প্রয়োজন। যদি এই কর প্রস্তাব কার্যকর হয়, তবে এটি দেশের অর্থনীতির জন্য বিপদজনক হতে পারে এবং বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যেতে পারে।

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করার জন্য রাজস্ব সংগ্রহের উপায় খোঁজা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে কর আরোপের মতো পদক্ষেপকে অনেক বিশেষজ্ঞই আত্মঘাতী হিসেবে দেখছেন। এতে প্রবাসীদের আস্থাহীনতা সৃষ্টি হতে পারে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। সরকারের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। তাই, এই সিদ্ধান্তে গভীর চিন্তা-ভাবনা করা উচিত, যাতে দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকে এবং প্রবাসীদের আস্থা বজায় থাকে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
©ziacyberforce.com
themesba-lates1749691102